eng
competition

Text Practice Mode

আবরার হত্যার রায়: ব্যক্তির বিচার, রাজনীতি খালাস

created Dec 9th 2021, 06:51 by Rimon121


2


Rating

692 words
14 completed
00:00
বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের রায়ে ২০ জনের ফাঁসি আর জনের যাবজ্জীবন দণ্ড হয়েছে। অনেকেই এই রায়ে খুশি। আবার কেউ কেউ আশংকা করছেন, বিশ্বজিৎ হত্যার রায়ের পরিনতি হতে পারে এই রায়ের। বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় আটজনের ফাঁসির সাজা হয়েছিল, পরে উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে ছয়জন রেহাই পেয়ে যান, আর ১৩ আসামি এখনো পলাতক।
প্রশ্ন অন্যখানেও, জনকে হত্যা করল ২৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী। এই ২৫ জনকে সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন কয়জন? নিশ্চয়ই তিনি কোনো ছাত্রনেতা কিংবা আরও বড় কোনো নেতা হবেন। মামলার অভিযোগপত্রে তো তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। তাহলে কি এই সাজাপ্রাপ্ত ২৫ জন আপন সিদ্ধান্তে আবরারকে চূড়ান্ত নির্মমতার সঙ্গে খুন করেছিলেন? এই রায় থেকে হত্যার চেইন অব কমান্ড পরিষ্কার হলো না। যাঁরা আবরারকে পিটিয়েছিলেন, তাঁরা হুকুম তামিলকারীমাত্র, তাঁরা হত্যাযন্ত্রমাত্র, হুকুমদাতা কে, যন্ত্রটা চালাচ্ছিল কে?একই সঙ্গে এই প্রশ্নও জাগে যে ছাত্রহত্যার সব ঘটনার কঠোর বিচার হলে হত্যাপিছু কত কত ফাঁসি আমাদের লাগবে। এক আবরারের জন্য যদি ২০টি ফাঁসি ৫টি যাবজ্জীবনের দরকার হয়, তাহলে গত ১০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তত ২৪টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে ছাত্রলীগের সদস্যদের হাতে।পুরান ঢাকার দরজি তরুণ বিশ্বজিৎ দাস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা জুবায়ের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র আবু বকর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন দিয়াজ ইরফান চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিম, ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় মারা যায় ১২ বছরের শিশু রাব্বি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তাপস সরকার, চাপাতির হামলায় মৃত্যুর কাছ থেকে ফেরা সিলেটের খাদিজা, চোখ হারানো এহসান। গণমাধ্যমের খবর জোড়া লাগালে দেখা যায়, গত ১০ বছরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যার প্রায় সব কটির সঙ্গেই ছাত্রলীগ জড়িত ছিল বলে অভিযোগ। এর মধ্যে ১৭টিই ঘটেছে নিজেদের অন্তঃকোন্দলে সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ১০ বছরে সেখানে শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।এর আগে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের হাতেও ঘটেছে অনেক নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এত এত ছাত্র হত্যা হয়েছে যে হাজার ফাঁসিতেও দোষীদের নিকাশ করা যাবে না। ফাঁসি সমাধান নয়; কথা বলার আগে বলা দরকার যে চূড়ান্ত শাস্তি দিয়ে পরে খালাস করে দেওয়াও সমাধান নয়। বিচার শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার থাকছে, এই নিশ্চয়তা জরুরি। তারপরও আদালতের কাজ আদালত করবেন। তবে রাজনীতির দায় তাতেই মওকুফ হয়ে যায় না।প্রতিটি খুনের পর পড়ে থাকে একটি লাশ আর দাঁড়িয়ে থাকে এক বা এক ডজন খুনি। বিচার না হলে এরা আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে। কেউ কেউ যে জাতীয় নেতাও হয়ে ওঠেন, তার বিস্তর প্রমাণ স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজনৈতিক ইতিহাস দেবে। আমাদের নেতা-নেত্রীরা নিজেদের সন্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক রাখতে অন্যের সন্তানকে দিয়ে অন্য আরেকজনের সন্তানকে খুন করাবেন কিংবা সে রকম সংগঠন চালাবেন; এটা কি চলতেই থাকবে? যদি চলে, তাহলে নিয়মিতভাবেই নিরীহ ছাত্রের লাশ বুকে নিয়ে একবার কাঁদতে হবে, পরেরবার সাজাপ্রাপ্ত ছাত্রদের মা-বাবা-ভাই-বোনের বুক চাপড়ানো দেখতে হবে। ছাত্র দিয়ে ছাত্র হত্যার এই খেলার খেলারাম কারা? আবরারকে হত্যার নির্দেশ যিনি বা যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা এক আদেশে নিহত খুনি মিলিয়ে ২৬টি পরিবারের সর্বনাশ ঘটিয়েছেন। বুয়েটে যিনি পড়তে যান, তিনি শুধু পরিবারের সন্তান নন, তাঁর প্রতি দেশেরও প্রত্যাশা থাকে, তাঁর পেছনে জনগণের করের টাকাও খরচ হয়। সেই রকম মেধাবী ছাত্রদের যে ছাত্ররাজনীতি খুনি বানিয়ে তোলে, বানিয়ে তোলে হৃদয়হীন; সেই রাজনীতির বিচার করবেন কোন আদালত? প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। এর বাইরে চালু আছে বিচারবহির্ভূত ‘ক্রসফায়ার’। পাবলিকের জন্য খোলা আছে পিটুনির পথ। ফাঁসি, ক্রসফায়ার, গণপিটুনি হলো সেই রাষ্ট্রের অপরাধ দমনের আইনি, বেআইনি বেসরকারি পন্থা, যেখানে শাস্তির মাধ্যমে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার আকাঙ্ক্ষা শক্তিশালী। প্রতিহিংসার জোশ যত, অপরাধের সুযোগ বন্ধ করার চিন্তা তত কম। দেশে যেহেতু অজস্র হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, অসংখ্য ফাঁসিকাষ্ঠ প্রস্তুত করাই কি তবে সমাধান? যে মরছে সে আমার ভাই, যে মারছে সে-ও তো আমার ভাই। আমরা যদি খুনি বানানো বন্ধ না করতে পারি, তাহলে কী করে খুন হওয়া ঠেকাব? ফাঁসি দিয়ে তো সেটা কমানো যায় না।আমরা ব্যক্তি আবরারকে হত্যার শাস্তির রায় পেয়েছি। কিন্তু আবরারকে হত্যা করা হয় কোনো ব্যক্তিগত কারণে নয়। আবরার দেশপ্রেমের আদর্শের কথা বলতেন, জাতীয় বঞ্চনার কথা বলতেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অসম্মানে তাঁর হৃদয় পীড়িত হতো। আবরারকে হত্যা করা হয়েছে আদর্শিক কারণে। আবরারের হত্যা একজন দেশপ্রেমী তরুণ প্রকৌশলীকে হত্যা। আবরারের মৃত্যু দেশের জন্য চরম ত্যাগের উদাহরণ। আবরারের আদর্শকে বাঁচাতে হলে যারা এই আদর্শকে ঘৃণা করে, হত্যার নির্দেশ দেয়, তাদেরও চিহ্নিত করা প্রয়োজন, তাদের আদর্শের গোমরও ফাঁস করা প্রয়োজন। সেটাই হবে আবরারকে মনে রাখার এবং তার ত্যাগের প্রতিদান দেওয়ার যোগ্য উপায়। আমরা যদি আর মৃত্যুর নামতা মুখস্থ করতে না চাই, তাহলে ছাত্রদের অপরাধী বানানোর কলাকৌশলের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

saving score / loading statistics ...